ডেস্ক রিপোর্ট
দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর রংপুরে বিভাগীয় জনসভা আয়োজন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপুরে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত এই জনসভায় দলের শীর্ষ নেতারা রাজনৈতিক সংস্কার, বিচারপ্রক্রিয়া ও উন্নয়ন ইস্যুতে নানা অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেন। বিশেষ করে, জুলাই মাসের বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের বিচার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গড়া এবং তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনার মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা।
জনসভা শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই জেলার আটটি জেলার প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জ থেকে জামায়াত-ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দলে দলে মাঠে জড়ো হতে থাকেন। সকাল থেকেই মাইক্রোবাস, ট্রাক, অটোরিকশা এমনকি সাইকেল ও হেঁটেও লোকজন সমাবেশস্থলে আসতে দেখা যায়। জুমার নামাজের পর পুরো এলাকা জনসমুদ্রের রূপ নেয়।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী থেকে আসা প্রবীণ কর্মী আবুল মো. রোকন উদ্দিন বলেন, “অনেক বছর পর এমন বড় জনসভায় এলাম। দলের প্রতি আমাদের বিশ্বাস অটুট ছিল, আছে, থাকবে। নেতাদের সামনে থেকে দেখতে কষ্ট হলেও আসতে হয়েছে।” সুন্দরগঞ্জ উপজেলা থেকে মাইক্রোবাসভর্তি কর্মীরা এসেছেন একসাথে, আর কুড়িগ্রাম থেকে প্রায় ৬০ জনের একটি দল সকালেই রওনা হন ভালো জায়গা দখলের আশায়। কারও হাতে ব্যানার, কারও হাতে দলীয় পতাকা— চারপাশে শৃঙ্খলিত এক উৎসবমুখর দৃশ্য।
ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ এসে সমাবেশে যোগ দেন। পঞ্চগড়ের এক ছাত্রশিবির কর্মী বলেন, “ছোটবেলায় বাবার কাছে এটিএম আজহারুল ইসলামের নাম শুনেছি। এবার সামনাসামনি দেখতে এসেছি।”
জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। সদ্য মুক্তি পাওয়া নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম প্রধান বক্তার আসন গ্রহণ করেন। এছাড়া নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিন ও মাহবুবুর রহমান বেলালও বক্তব্য দেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, এই জনসভায় দুই লাখের বেশি মানুষের সমাগমের লক্ষ্য নিয়ে রংপুর ও আশেপাশের জেলাগুলোতে কয়েক সপ্তাহ ধরে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, পোস্টার লাগানো, তোরণ নির্মাণ এবং মোটরসাইকেল র্যালিসহ নানা প্রচার কার্যক্রম চালানো হয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে সজ্জিত করা হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুনে।
এদিকে সমাবেশ নির্বিঘ্ন করতে মহানগর পুলিশ চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী মাঠের নিরাপত্তাব্যবস্থা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে সাংবাদিকদের বলেন, “জনসভাকে ঘিরে মাঠ ও আশপাশে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আমরা আশা করি, শান্তিপূর্ণভাবে জনসভা শেষ হবে।”
দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এই জনসভা শুধু সমাবেশ নয়, উত্তরাঞ্চলের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন বার্তা দেবে। বহু বাধাবিপত্তি পেরিয়ে মাঠে নামা এই শোডাউনকে ঘিরে স্থানীয় রাজনীতিতে আলোচনা তুঙ্গে।
মুক্তির প্রত্যাশা মিডিয়া ,কপিরাইট © মুক্তির প্রত্যাশা - সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Leave a Reply