1. admin@muktirprottasha.com : news_admin :
মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০৩:১০ অপরাহ্ন
বিশেষ বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে......

একটি ঘোড়ার মৃত্যু ও সমাজের নৈতিক অবক্ষয়

  • প্রকাশিত : সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫
  • ২৫ বার শেয়ার হয়েছে

গোলাম আজম:

মৃত্যুর সংবাদ পেলেই যার মন কেঁপে উঠতো, যিনি আর স্থির থাকতে পারতেন না—তিনি মনু মিয়া। পেশাদার কবর খননকারী নন, বরং একজন আত্মত্যাগী সেবক, যিনি পারিশ্রমিকের তোয়াক্কা না করেই মানুষের শেষ বিদায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন নিজের তাগিদে, নিজের ঈমানি অনুভূতি থেকে। এমন একজন মানুষের ঘোড়াটিকে যখন দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায়, তখন এটি শুধু একটি প্রাণীর মৃত্যু নয়—এটি সমাজের বিবেকের মৃত্যু, মানবিকতার বিপর্যয়।

মনু মিয়ার জীবনের দৃষ্টান্ত এক অসাধারণ অনুপ্রেরণা। পার্থিব কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা না থাকলেও তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মানুষের কল্যাণকে সামনে রেখেই কাজ করে গেছেন। পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে একের পর এক ঘোড়া কিনেছেন, যেন হাওরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রুত পৌঁছাতে পারেন মৃত্যুবরণকারী ভাই-বোনদের কবর খোঁড়ার কাজে। এই যে ঈমানদার এক খেদমতের জীবন, তা কি আমাদের রাষ্ট্র বা সমাজ কখনো যথোচিত সম্মান দিয়েছে?

দুঃখজনকভাবে, সমাজ আজ সেই মনুষ্যত্ব ভুলে যাচ্ছে। যখন একজন নিঃস্ব, নিঃসন্তান বৃদ্ধ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন, তখনই তার বিশ্বস্ত সঙ্গী, তার খেদমতের একান্ত বাহনটি নির্মমভাবে কুপিয়ে ফেলা হয়। ঘোড়াটিকে হত্যা করা হয়েছে সেই সময়ে, যখন মনু মিয়া চিকিৎসাধীন এবং ঘোড়াটি তার বাসায় ফাঁকা পড়ে ছিল। এই হামলা উদ্দেশ্যহীন নয়, বরং এটি হিংসা, বিদ্বেষ এবং পাষাণতার প্রকাশ।

ইসলামী মূল্যবোধ আমাদের শিক্ষা দেয়, “যে ব্যক্তি একটি নিরপরাধ প্রাণীকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, সে যেন পুরো মানবজাতিকে হত্যা করলো” (সূরা মায়িদা: ৩২)। সেই বিবেচনায় এই ঘোড়া হত্যাকাণ্ড শুধুই একটি প্রাণহানির ঘটনা নয়, এটি মানবিকতাবিরোধী অপরাধ।

প্রশাসন এখনো অভিযোগ না পাওয়ার কথা বলছে। কিন্তু সমাজ কি শুধুই আইনের মুখপাত্র? আমাদের নৈতিক দায়িত্ব নেই? আমাদের সমাজ কি এতটাই বোধহীন হয়ে গেছে, যেখানে সেবক নিঃস্ব মানুষের উপর ঘটে যাওয়া নির্মমতাও প্রতিক্রিয়া তৈরি করে না?

আমরা এই ঘটনাকে চরম নিন্দা জানাই এবং প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত হোক। একইসঙ্গে এই সমাজের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই—আমরা কীভাবে এমন নিষ্ঠুরতার মধ্যে বসবাস করছি যেখানে একটি ঘোড়ার পিঠে ভর করে হাজারো মানুষকে সম্মানের কবর দিতে সাহায্য করা একজন বৃদ্ধ খোদক আজ নিঃসঙ্গ, আর তার সঙ্গী ঘোড়াটি নৃশংসভাবে মৃত্যুবরণ করছে?

মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে হলে শুধু বক্তৃতা নয়, দরকার কার্যকর সহমর্মিতা, নৈতিক প্রতিরোধ এবং সমাজের প্রত্যেক স্তরে নৈতিক ও ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা। সেই চেতনাই আজ আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, মুক্তির প্রত্যাশা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন

মুক্তির প্রত্যাশা মিডিয়া ,কপিরাইট © মুক্তির প্রত্যাশা - সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

কারিগরি সহযোগিতায়: জাগো হোষ্টার বিডি