নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণের পাশাপাশি হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসীরা। প্রাণহানি ঘটেছে বহু ছাত্র-জনতার।
সেই রণক্ষেত্রে সামনের সারির যোদ্ধা ছিলেন হাফেজ সালেহ আহমদ। গত বছরের ১৮ জুলাই তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ভয়ে ১৭ দিন বিনাচিকিৎসায় কাটিয়েছেন তিনি। পরে চিকিৎসা জুটলেও ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে। বের করা যায়নি সব গুলি। হাসপাতালে দৌড়ে ইতোমধ্যে লাখ লাখ টাকা খরচ করেছেন, শেষ সম্বল বিক্রি করে। এখন তিনি নিঃস্ব, দিন কাটাচ্ছেন অনাহারে-অর্ধাহারে।
জানা গেছে, সালেহ আহমদ মৌলভীবাজারের রাজনগরের পাঁচগাঁও ইউনিয়নের রক্তা গ্রামের মৃত আবদুস ছামাদ আলমগীরের ছেলে। গ্রামের মাদরাসায় পবিত্র কোরআনে হাফেজ হওয়ার পর অর্থাভাবে তিনি স্থানীয় কোনো মাদরাসায় ভর্তি হতে না পেরে ঢাকায় চলে যান। যাত্রাবাড়ী এলাকায় টিউশনি ও ছোট একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে নিজের পড়ালেখার খরচ জোগার করছিলেন। এরই মধ্যে চলে আসে ছাত্র-জনতার অধিকার আদায়ের আন্দোলন।
তিনি জানান, স্থানীয়দের সঙ্গে মিলে অংশ নেন বিক্ষোভ মিছিলে। নিয়মিত কর্মসূচিতে যাওয়ার কারণে হারাতে হয় চাকরিটি। এরপর একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হন। শরীরে দুই শতাধিক ছররা গুলি ও রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়। প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে দেখে সহযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু রাস্তায় ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা গাড়ি আটকে তাদের আরেক দফা পিটুনি দেয়।
সালেহ আহমদ বলেন, তখন কোনো রকমে পালিয়ে পাশের একটি ফার্মেসিতে প্রাথমিক সেবা নিয়ে বাসায় ফিরি। এরপর বিছানায় পড়ে যাওয়ায় আর রাজপথে যেতে পারিনি। তবে পুলিশ ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের ভয়ে কোথাও চিকিৎসাও নিতে পারেননি। এভাবে কেটে প্রায় ১৭ দিন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হই। কিন্তু অর্থাভাবে সুচিকিৎসা মেলেনি।
তিনি আরো বলেন, ‘পরিবারে আমার খরচ চালানোর মতো কেউ না থাকায় মহাসংকটে পড়ে যাই। তখন বাড়িতে শেষ সম্বল যা ছিল, সবই বিক্রি করে প্রায় সাত লাখ টাকার মতো খরচ করি। তাতেও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারিনি। শরীরের বাঁ পাশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁ চোখের আলো নিভু নিভু, বাঁ পা পঙ্গু হয়ে যাওয়ার পথে। এখনো অনেক গুলি শরীরের রয়ে গেছে। চিকিৎসক বলেছেন এগুলো বের করতে চাইলে পা-টি কেটে ফেলতে হতে পারে। এভাবে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছি। মাঝেমধ্যেই প্রচণ্ড ব্যথায় ছটফট করতে হয়।
জুলাইযোদ্ধার ভাই সাদিক আহমদ আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, জুলাই বিপ্লবে আমার ভাই যে সাহসিকতা দেখিয়েছে, তাতে আমি গর্বিত। আমি চাই, সরকার আমার ভাইয়ের মতো আহতদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিক, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা করুক। এ ছাড়া ন্যায়বিচার ও প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে।
মুক্তির প্রত্যাশা মিডিয়া ,কপিরাইট © মুক্তির প্রত্যাশা - সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Leave a Reply