নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও বগুড়া-৭ (শাজাহানপুর-গাবতলী) আসনের এমপি পদপ্রার্থী মোঃ গোলাম রব্বানী বলেছেন, "শ্রমজীবী মানুষই দেশের উৎপাদন ও অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। অথচ তারা আজও ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং চিকিৎসা-বাসস্থানসহ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। সরকারের তথাকথিত উন্নয়ন প্রকল্পের ডঙ্কা বাজানো হলেও শ্রমিকদের জীবনমানের কোনো পরিবর্তন আসেনি। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিশ্চিত না হলে উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রকৃত উন্নয়ন তখনই সম্ভব, যখন সমাজের প্রান্তিক এই শ্রেণীর মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত হবে।"
শনিবার (১৪ জুন) সকালে স্থানীয় হলরুমে বগুড়ার গাবতলী উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
প্রধান অতিথি গোলাম রব্বানী বলেন, "যে রাষ্ট্রে শ্রমিকরা ঈদের দিনে পরিবারের জন্য দুমুঠো ভালো খাবার দিতে পারে না, সে রাষ্ট্রে দৃষ্টিনন্দন সেতু বা মেট্রোরেল নির্মাণ করলেও সেটি জনগণের উন্নয়ন নয়, বরং বৈষম্যের প্রতিচ্ছবি। আমরা চাই একটি মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, যেখানে ইসলামি মূল্যবোধের আলোকে শ্রমিকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে।"
তিনি বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় শ্রমিকের কোনো স্বপ্ন পূরণের সুযোগ নেই। প্রতিটি খাতে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার শ্রমিকের ন্যায্যতা হরণ করছে। আমরা দেখতে পাই, গার্মেন্টস, নির্মাণ, পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে শ্রমিকরা বছরের পর বছর কাজ করেও অবসরকালীন সুবিধা তো দূরের কথা, মাস শেষে বেতন পেতেও দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কেবল একটি সংগঠন নয়, এটি একটি আদর্শিক আন্দোলন। আমরা চাই এমন একটি রাষ্ট্র, যেখানে ইসলামী আদর্শে পরিচালিত সমাজব্যবস্থায় শ্রমিক, মেহনতি জনতা, কৃষক ও দিনমজুরের সম্মান থাকবে। রাসূল (সা.) বলেছিলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন শ্রমিককে কাজে নিয়োগ দেয়, তখন তার মজুরি স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে দাও এবং ঘাম শুকানোর আগেই তার পারিশ্রমিক পরিশোধ করো।’ আজ আমরা সেই শিক্ষাকে গ্রহণ করে ফেডারেশনের মাধ্যমে আমরা সেই মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, “আমি যদি আগামী জাতীয় নির্বাচনে আপনাদের দোয়া ও সমর্থনে বিজয়ী হতে পারি, তাহলে ইনশাআল্লাহ বগুড়া-৭ আসনের প্রতিটি শ্রমিক যেন তার ন্যায্য অধিকার পায়, সে লক্ষ্যে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবো। আমি আপনাদের সাথেই আছি, থাকবো।”
ফেডারেশনের উপজেলা সভাপতি মোঃ রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইয়াছিন আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান মেহমান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোঃ আব্দুল মতিন।
প্রধান মেহমান অধ্যাপক মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, “ঈদ পুনর্মিলনী শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি পারস্পরিক ভালোবাসা, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ববোধের প্রকাশ। আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আমরা সবাই একে অপরের অংশ—বিশেষত শ্রমিক সমাজ আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে নিরলস ভূমিকা পালন করছে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “ইসলাম এমন একটি জীবনব্যবস্থা দেয়, যেখানে শ্রমিক-মালিক উভয়ের দায়িত্ব ও অধিকার নির্ধারিত। ইসলামী অর্থনীতিতে জাকাত, সদকা, ইনসাফপূর্ণ মজুরি ব্যবস্থা এবং সম্পদের ন্যায্য বণ্টনের মাধ্যমে শ্রমিকের সম্মান রক্ষা করা হয়। আজ যদি সমাজে এই নৈতিকতা ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হতো, তাহলে এই শ্রেণীর মানুষ এত নিপীড়িত হতো না।”
তিনি শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আপনারা সংঘবদ্ধ থাকুন, শিক্ষিত ও সচেতন হোন। কেবল মজুরি বাড়ানো নয়, ইসলামী আদর্শে গড়ে ওঠা সমাজব্যবস্থার দাবি তুলুন—যেখানে কেউ পুঁজির দাস নয়, বরং প্রত্যেকে সম্মানের সঙ্গে বাঁচে।”
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ফেডারেশনের জেলা সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম বাদশা, জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আতাউর রহমান, শাজাহানপুর উপজেলা শাখার উপদেষ্টা মাওলানা মোঃ শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, শ্রমিকদের কল্যাণ ও অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ঈদ পুনর্মিলনীর মতো মানবিক আয়োজন শ্রমিকদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও একতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অনুষ্ঠান শেষে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে দেশ, জাতি ও শ্রমিক সমাজের কল্যাণ কামনা করা হয়।